চরিত্র
চৌধুরী
পরিবার: মিঃ চৌধুরী, মিসেস চৌধুরী, সুরঞ্জন
রিয়েল
এস্টেট এজেন্ট: মিঃ চ্যাট
প্রতিবেশী
তরুণ দম্পতি: রিত, রিমা
চৌধুরীদের
লিভিং রুম। মিসেস চৌধুরী টেবিল গোছাতে ব্যস্ত। মিঃ চৌধুরী ফোন নিয়ে মগ্ন। এদিক ওদিক
ঘোরাঘুরি করছে উদ্বিগ্ন ভাবে, সম্ভবত কানেকশন সমস্যা হচ্ছে।
মঞ্চ
খুবই সাধারণ হলে চলবে। একটা সোফা এবং কয়েকটা চেয়ার, অথবা শুধুই পাঁচটা চেয়ার ও একটা
সেন্টার টেবিল যথেষ্ট। একটা বারান্দার আভাস থাকলে ভালো হয়। শব্দ সংযোজন, সঙ্গীত প্রয়োগ,
আনুষঙ্গিক মঞ্চসজ্জা এবং পোষাক পরিচ্ছদ নির্দেশকের পছন্দ মাফিক।
মিঃ: আসছে আসছে…এই রে যা, চলে গেল…আয় আয়…
একবার আয়, ফেসবুকটা একবার খুলি... বাবুসোনা…
মিসেস
চৌধুরী আড়চোখে লক্ষ্য করছে এবং বিরক্ত
মিসেস: ঐ এক জ্বালা হয়েছে। টিন এজার মত দিন
রাত ফোনটা নিয়ে একবার ঘর একবার ব্যালকনি এই চলছে
মি: যাঃ চলে গেল, ভেবেছিলাম একটা সেলফি
আপলোড করবো…
মিসেস: কী করবে?
মি: সেলফি তুলবো, চকাচক
মিসেস: খুব হয়েছে, ওসব ছেড়ে একটু কাজের কাজ
করো। সোফা থেকে জিনিসপত্র সরিয়ে একটু খালি করো, ওদের আসার সময় হয়ে এল। ঘরদোর অগোছালো
থাকলে কেমন লাগে?
মি: আরে এত ঘর গোছানোর কী আছে? ওরা ত আর তোমার ছেলেকে দেখতে আসছে না।
মিসেস: তাই বললে হয়? নিশ্চয় খুব বড় বাড়ির মেয়ে,
কেমন ফুটফুটে দেখতে, আর কী মিষ্টি করে বলল, মাসীমা আজ থেকে আমরা আপনার প্রতিবেশী –
মি: আর তুমি তাই গলে গিয়ে চায়ের নেমন্তন্ন
করে দিলে!
মিসেস: আহা, করবো না?
মি: শুধু তো চা নয়, চায়ের সাথে কত রকমের
টা,
মিসেস: কতরকম আর কোথায়! একটু কেক, সঙ্গে লুচি,
মাংস, আর – ও হ্যাঁ তোমাকে যে মিষ্টি আনতে বলেছিলাম
মি: এনেছি তো
মিসেস: কোথায়?
মি: এই টেবিলেই ত রেখেছিলাম
[
কাগজপত্রের তলা থেকে মিষ্টির প্যাকেট বেরোয়। মিসেস চৌধুরী ক্ষিপ্ত]
মিসেস: তোমাকে কতবার বলেছি পচার দোকান থেকে
মিষ্টি কিনবে না
মি: কী করব, নিউ সুইটস-এ লাইন দিতে হয়।
মিসেস: হবে না? কী ভালো দোকান, মিষ্টির গায়ে
সব ইংরাজীতে নাম লেখা -- হানি-বানি ক্ষীরকদম, লাভি-ডাভি রসগোল্লা।
মি: [ফোন থেকে নজর না সরিয়ে, তাচ্ছিল্যের
সুরে] রসগোল্লার আবার ইংরেজি নাম! … [ হঠাৎ..] এসেছে এসেছে…
মিসেস: ওরা এসে গেছে?
মি: না, না, ফেসবুক
মিসেস: ভীমরতি আর কাকে বলে?
মি: [ফোনে চোখ রেখে] আমার কালকের সেলফিতে
ফর্টি লাইকস !
মিসেস: আর কটা লাভ?
মি: তিনটে – ‘মিসেস হায়দার’, ‘মিস টুম্পা’,
আর ‘আমি জানকী বলছি’
মিসেস: আমি মরে গেলে ঐ তিনটেকে বিয়ে কোরো।
মি: ধ্যুস, তাই করে নাকি? মিস টুম্পা তাও
চলে, বাকিগুলো…
মিসেস: নিজের বিয়ের কথা বাদ দিয়ে ছেলের বিয়ের
কথা ভাবো।
মি: কেন কী হলো?
মিসেস: আজকে এই এতগুলো চিঠি এসেছে, সব বিয়ের
সম্বন্ধ।
মি: তাই নাকি?
মিসেস: তুমি একটু চোখ বোলাও তো, সব বেছে বেছে
জেলা হিসাবে রাখবে, এইখানে কলকাতা --সবার আগে
মি: বেশ [ চিঠি সর্টিং শুরু করে ] বর্ধমান,
বর্ধমান, হাওড়া, পুরুলিয়া, … আচ্ছা এটা দেখো তো, এ ত কোন ঠিকানাই দেয় নি
মিসেস: [ হাতে নিয়ে] এ তো এমনি চিঠি, কিন্তু
কে লিখবে? আজকাল তো চিঠি লেখাই উঠে গেছে। তাহলে …
মি: পিওন ভুল করে নি তো?
মিসেস: না, এ তো আমাদেরই ঠিকানা, তোমাকে উদ্দেশ্য
করে লেখা, -- মিঃ চৌধুরী
মি: দেখি, [ খাম খোলে, চিঠি বের করে উল্টেপাল্টে
দেখে ] মেয়েলি হাতের লেখা
মিসেস: নিশ্চয় মিসেস হায়দার, বড্ড গায়ে পড়া
মি: “প্রিয়তম পরিতোষ, অনেকদিন হয়ে গেল
–” [ হঠাৎ থমকে ] পরিতোষ কে? [একটু ভেবে, হঠাৎ আবিষ্কার করে ] বুঝে গেছি । এটা বগার
চিঠি।
মিসেস: কিন্তু বগার নাম কেন পরিতোষ হবে?
মি: হা হা হা। কিসসু বোঝো না তুমি। ওটা
প্রেমিকার দেওয়া কোডনাম । [স্বগতোক্তি] আমাদের সময়েও চলত।
মিসেস: ওমা কী হবে? এই যে এতগুলো সম্বন্ধ এসেছে
..
মি: [গম্ভীরভাবে ] Competition,
Competition is good
মিসেস: আচ্ছা তুমি চিঠিটা একটু পড়ে শোনাও তো,
মেয়েটা সম্পর্কে একটু আন্দাজ হবে।
মি: গুড আইডিয়া। [ পড়া শুরু করে ] “প্রিয়তম
পরিতোষ, অনেকদিন হয়ে গেল তোমার কোন খোঁজ নেই। মন্দারমণির কথা মনে আছে ? তুমি আর আমি
সী বীচে বসে কোল্ড ড্রিংক খাচ্ছিলাম। তোমার চোখে ছিল সান গ্লাস, আর আমার চোখে স্বপ্ন।
মিসেস: আহা কী সুন্দর ভাষা !
মি: “তারপর হেড অফিসে ফোন করতে যাচ্ছি বলে
সেই যে গেলে আর এলে না।
মিসেস: কাজটা বগা ভালো করে নি।
মি: বেশ করেছে, কোল্ড ড্রিংক খেলেই বিয়ে
করতে হবে নাকি? যাই হোক বাকিটা শোন, “যখন দেখলাম তুমি সিমটাও চেঞ্জ করেছো, তখন ঠিক
করলাম আমাদের মুখোমুখি হওয়া দরকার। এসো না পাঁচ তারিখ গ্রাণ্ড হোটেলে। লক্ষীটি না বলো
না। ইতি, তোমার মণিমালা”
মিসেস: মণিমালা, কী মিষ্টি নাম !
মি: বগার কপাল বটে, গ্র্যাণ্ড হোটেলে প্রেম
করতে যাবে।
মিসেস: না না প্রেম নয়, পুরনো প্রেমিকার সাথে
বোঝাপড়া। এমন হয়েই থাকে, আমি ভাবলাম কি না কি।
[ কলিং বেল বাজবে ]
মিসেস: চলো, এসেছে মনে হচ্ছে।
[
মিসেস দরজা খোলে। বগা বা সুরঞ্জনের প্রবেশ ।]
কি
রে, তুই আজ এত তাড়াতাড়ি ফিরলি?
সুরঞ্জন: আর বলো না, দুপুর থেকেই অফিসে কাজ বন্ধ।
ম্যানেজার সুইসাইড করেছে।
মিসেস: সে কি!
মি: কোথায় করল? অফিসে?
সুরঞ্জন: না হোটেলে
মি: কোন্ হোটেল ?
সুরঞ্জন: ঠিক জানি না, গ্রাণ্ডে বোধহয় ।
মিসেস: ওমা! গ্র্যাণ্ড!
সুরঞ্জন: আবার গুজব শুনছি কেউ poison খাইয়ে থাকতে
পারে। যাকগে, খেতে দাও।
মিসেস: দু মিনিট দাঁড়া, এখুনি লুচি ভাজব। এই
পাশের ফ্ল্যাটের রিত আর রিমাকে চা খেতে ডেকেছি।
সুরঞ্জন: ঐ যারা নতুন এসেছে? Nice couple.
মিসেস: আমি তাহলে ময়দাটা মাখি ততক্ষণ, তোমরা
দুজনে চিঠিগুলো গুছিয়ে রাখো।
সুরঞ্জন: কিসের চিঠি, [ হঠাৎ নজরে পড়ে ] এগুলো
কি --?
মি: ঠিকই ধরেছ, তোমার বিয়ের সম্বন্ধ। [হাসতে
হাসতে ] টেবিল ভর্তি মেয়ে যাকে খুশি বেছে নাও।
সুরঞ্জন: এভাবে কি বাছতে পারবো?
মি: সবাই পারে না, তুমি পারবে। I trust
your judgment. [ সুরঞ্জন অবাক হয়। ] মন্দারমণির কেসটা তুমি যেভাবে handle করেছিলে…
সুরঞ্জন: [ অবাক হয় ] কীসের কেস? মন্দারমণি?
মন্দারমণিতে ত আমাদের কোন project হয় নি।
মি: এ প্রজেক্ট সে প্রজেক্ট নয়। মনে করে
দেখো, সী বীচ, কোল্ড ড্রিংকস,…
সুরঞ্জন: সে একবার বন্ধুদের সাথে গিয়েছিলাম,
কিন্তু --
মি: একটা hint দিচ্ছি – মণিমালা
সুরঞ্জন: মণিমালা? [ভাবার চেষ্টা করে ] ঐ নামে
ত কাউকে চিনি না । তবে কলেজে দুই জমজ বোনকে চিনতাম – একজনের নাম মণি, আরেক জনের নাম
মালা।
মি: ওরে বাবা, দুজন আছে এর মধ্যে? ওগো একবার
এদিকে এসো, কোথায় তুমি?
[মিসেস
চৌধুরীর প্রবেশ]
সুরঞ্জন: [স্বগতোক্তি ] মণিমালাকে বাবা চিনল
কীকরে?
মি: [ মিসেস চৌধুরীকে] শোনো, ঐ মণিমালা
আসলে দুটো মেয়ে, জমজ বোন। বগার সাহস আছে বটে। You are a brave man.
সুরঞ্জন: কীসের কথা বলছ?
মি: এই চিঠিটা পড়ো, তাহলেই বুঝবে। [ চিঠি
দেয় ]
মিসেস: আমার খুব ভয় করছে, দুই বোন মিলে কোল্ড
ড্রিংকসে যদি বিষ মিশিয়ে দেয়।
মি: You mean REVENGE. Possible
মিসেস: পসিবল বললেই হয়ে গেল? একটা কিছু করো।
মি: বগা, আমি বলি কি, গ্র্যান্ডে যাবি যা,
কোল্ড ড্রিংকসটা খাবি না, চা জলও না।
সুরঞ্জন: [ চিঠি শেষ করেছে ] এটা ভুল
চিঠি । এখানে পরিতোষ নামে কে আছে?
মি: আমি ভাবলাম, মেয়েটা তোকে পরিতোষ বলে
ডাকে। এরকম ত হয়ই।
সুরঞ্জন: আর মণি বা মালা কারো সাথেই আমার কোন
আলাপ ছিল না। চিনতাম এইটুকু।
মিসেস: যাক বাঁচা গেল। তুমি চিঠিটা ছিঁড়ে ফেল।
সুরঞ্জন: ছিঁড়ো না, রেখে দাও । পরিতোষকে একবার
জিগ্যেস করি।
মি: ও, পরিতোষ নামে তাহলে কেউ আছে!
সুরঞ্জন: আছে, পরিতোষ আমার সঙ্গে জয়েন্টের টিউশানি
পড়তে যেত। [স্বগতোক্তি] কিন্তু পরিতোষকে মণি মালারা চিনবে কী করে? [চিন্তিত]
[কলিং
বেল। মিঃ চৌধুরী চিঠি পকেটে রেখে দেয়। মিসেস চৌধুরী দরজা খোলে । অপরিচিত ব্যক্তি –মি
চ্যাট। হাতে নোটবই। ]
মিসেস: কাকে চাই?
চ্যাট: মি চৌধুরী
মিসেস: কোন্ চৌধুরী? বাবা না ছেলে?
সুরঞ্জন: ও, হ্যালো মি চ্যাটার্জী,
please come in
চ্যাট: ও, Call me Chat
সুরঞ্জন: বাবা ইনি Apollo Real Estate থেকে আসছেন।
চ্যাট: That’s right. [ চারদিকে তাকিয়ে ]
Very old flat, no view, no air circulation
মি: AC চালাবো?
চ্যাট: No, no I am fine. This is my job. আপনার
ফ্ল্যাটটা মি চৌধুরী হাই রিস্ক,
মি: ভেঙে পড়বে নাকি।
চ্যাট: পড়তে পারে। তবে সেটা আমাদের
structural engineer বলতে পারবে। তবে আর কিছুদিন গেলেই ভূতবাড়ি হয়ে যাবে।
মি: হয়ে যাবে কি! অলরেডি ভূত আছে।
চ্যাট: Oh my God! কোথায় থাকে সে?
মি: ছাদের ওপর, জলের ট্যাংকে।
মিসেস: আপনাকে একটু জল দিই।
চ্যাট: জল! না না, ঠিক আছে। I carry my own
bottle (water bottle দেখায়)। আপনাদের উচিত এই ফ্ল্যাট বিক্রি করে অন্য কোথাও উঠে যাওয়ার।
মিসেস: না, না, বাড়ি কেন বিক্রি করব? আমরা এখানে
কতদিন আছি!
সুরঞ্জন: [বাবার উদ্দ্যশে] মি চ্যাটার্জী
–
চ্যাট: চ্যাট
সুরঞ্জন: চ্যাট আমাদের অফিসে এসেছিলেন ওদের project নিয়ে
কথা বলতে।
চ্যাট: Special discount আপনাদের জন্যে
সুরঞ্জন: অনেকেই interested. তাই আমি
ভাবলাম একবার উনি এসে যদি explain করেন –
চ্যাট: দেখুন মি চৌধুরী, এটা একটা
investment
মি: কিন্তু আমরা আর এই বয়সে invest করে কী
করব? আমাদের ত ঐ জলের ট্যাংকে যাওয়ার বয়স হয়ে গেছে, কী বলো (মিসেসকে)?
মিসেস: তোমার ঐ এক কথা, ওদিকে Facebook-এ ত
friend list বেড়েই চলেছে।
সুরঞ্জন: আপনি ঐ investment-এর কথাটা
একটু বলুন ত।
চ্যাট: ব্যাংকে টাকা রেখে কী লাভ? রিয়েল এস্টেটে
ইনভেস্ট করুন। Twelve percent-এ অ্যাপ্রিসিয়েট করবে। এই হচ্ছে আমদর ড্রিম প্রজক্ট, unique in the world. [ বড় ম্যাপ বের করে
টেবিলে রাখে ], Project Renaissance, গঙ্গার ধারে পঁচিশ একরের কমপ্লেক্স।
মিসেস: গঙ্গার ধারে! বাঃ, খুব খোলামেলা হবে…
চ্যাট: Exactly, no pollution, আপনারা এইখানে
(ম্যাপ দেখিয়ে) কিনবেন – Senior citizen enclave
মি: মানে বৃদ্ধাশ্রম?
চ্যাট: No no, don’t use the B word. You
are all very young. Ha ha ha. আচ্ছা বলুন, আপনার interest কিসে? Politics,
Culture, না Religion…?
মি: (একটু ভেবে) Facebook
চ্যাট: Good choice, ha ha ha…
মিসেস: কালচার বলো…
মি: হ্যাঁ, কালচার
চ্যাট: সেই ত, কালচার ভালোবসে না, এমন বাঙ্গালী
কি আছে? আসুন Plot 56 to 65. এই পুরো জায়গাটাই কালচারড লোকেদের জন্যে। এইখানে আপনি
পাবেন একশ বছর আগের আদি কলকাতা.
সুরঞ্জন: মানে আপনারা কি থিম পার্ক
বানাচ্ছেন?
চ্যাট: একদম, এমন একটা থিম পার্ক যেখানে আপনি
বাস করবেন।
সুরঞ্জন: Intresting, আপনারা ১৯০০-এর
কলকাতা recreate করবেন তাই ত?
চ্যাট: আপনি ঠিক ধরেছেন। Unique project, তাই
না? আপনাদের অফিসে অনেকেই interested. Mr Jaisawal ত একটা Bunglow-ই কিনেই ফেললেন
সুরঞ্জন: Jaisawal, মানে Sohanlal
Jaisawal?
চ্যাট: Yes
সুরঞ্জন: আমার ম্যানেজার (অন্যমনস্ক)
চ্যাট: উনি কার জন্যে কেন কিনলেন...let’s
see. (নোটবুক খুলে) … confidential matter, কিন্তু আপনাদের বলতে পারি… হ্যাঁ, এই যে,
Miss Padma Sangvi.
সুরঞ্জন: Oh my God!
চ্যাট: What happened?
সুরঞ্জন: Mr Jaisawal is dead
চ্যাট: What! Can’t believe it!
মি: আজকেই সুইসাইড করেছে
চ্যাট: Very sa. যাকগে, doesn’t matter. উনি
ফুল পেমেন্ট করে দিয়েছেন. এখন বাঙলো রেডি হলেই মিস সাঙভি move in করবেন.
সুরঞ্জন: Miss Sangvi আমাদের
Public Relations Officer
চ্যাট: That’s right – PRO Sangvi. যে কথা বলছিলাম,
আমাদের কমপলেক্সে বাঙালী আইকনদের স্টাচু থাকবে রবন্দ্রনাথ, বঙ্কিম, নজরুল, বিদ্যাসাগর
… all marbel statue
মিসেস: যাতে কেউ ভাঙতে না পারে
চ্যাট: Exactly
মি: দারুণ ব্যাপার, আচ্ছা সুভাষ বোস থাকছে
না?
চ্যাট: অবশ্যই। ওটা আপনি political
complex-এ পাবেন, প্লট ৫০ থেকে ৫৫, বীর বাঙালী বিহার। Interested?
মিঃ না, না, কালচারই ভলো।
চ্যাট: আমিও তাই রেকমেন্ড করব। আমাদের
public address system-এ সকালে রবীন্দ্রসংগীত, দুপুরে ঘুম পাড়ানি বাংলা আধুনিক, আর
রাত্রে বলিউড
মি: নিধুবাবুর টপ্পা থাকবে না?
চ্যাট: টপ্পা? যদি চান অফিসকে বলে দেখতে পারি।
[ম্যাপে আঙুল দেখিয়ে] এইখান পাড়াগুলো দেখুন
– বাগবাজার, শোভাবাজার, সোনাগাছি…
মিসেস: ছিঃ
মি: ছি কেন? লাহোর থেকে বাঈজী আসত জানো?
চ্যাট: তারপরে এইখানে জোড়াসাঁকো, আর বৌবাজার
মি: দারুণ প্ল্যান
চ্যাট: তাহলে বাগবাজারে নীলকুঠি বিল্ডিং-এ একটা
ফ্ল্যাট নিন, চাইলে একটা ভূতবাংলোও নিতে পারেন।
মিসেস: কিন্তু দাম কেমন পড়বে?
চ্যাট: আপনাদের special discount দিয়ে পড়বে,
একটা দুই BHK-র জন্যে পড়বে, let’s see… (with a calculator) 420,000
মি: চারশো বিশ হাজার…মাত্র।
চ্যাট: Yes, only 420,000 US dollars
মি: অ্যাঁ, ডলার? (প্রায় মূর্ছা যাবার অবস্থা)
মাথা ঘুরছে আমার, একটার পর একটা শূণ্য আসছে …
[মিসেস
এসে সামলায়] না, না, ঠিক আছি।
সুরঞ্জন: আচ্ছা আপনাদের কি rupee
payment নাই
চ্যাট: আপনি rupee-তে pay করবেন আমরা
dollar-এ convert করে নেব। এটা special NRI project. Rupee দিলে একটু বেশি দাম পড়বে।।
সুরঞ্জন: আমাদের পক্ষে খুবই costly.
মি: দেখলেন ত, টাকার অঙ্ক শুনে এখনি গঙ্গাযাত্রা
করছিলাম।
সুরঞ্জন: আপনাদের cheaper কিছু নেই?
চ্যাট: Renaissance complex-এ এটাই
cheapest. আমরা লোনের ব্যবস্থা করে দেব। একটু ভেবে দেখুন।
সুরঞ্জন: অত লোন শোধ করব কী করে?
চ্যাট: যদি কম দামের মধ্যে চান, তাহলে সিটি
টাওয়ারের কথা বলতে পারি,
সুরঞ্জন: সেটা কোথায়?
চ্যাট:
গার্লস কলেজের পাশে
সুরঞ্জন: ও! ঐটা
চ্যাট:
দারুণ ফিনিশ, থীম পার্ক নেই, কিন্তু সমস্ত ফ্ল্যাটই লাক্সারি ফ্ল্যাট।
সুরঞ্জন: ওগুলোও কি expensive?
চ্যাট: সামান্য, বুঝতেই পারছেন আমরা মার্কেট
লীডার একটু প্রিমিয়াম ত থাকবেই। Why not you give a call to my friend Snajib Das?
[নেমকার্ড দেয়] সঞ্জীব সিটি টাওয়ারের বুকিং হ্যান্ডেল করছে।
সুরঞ্জন: We can never afford it.
চ্যাট:
Never say never Mr Chowdhury… ha ha ... Thank you Uncle, Auntie, think
about Project Renaissance, Tagor songs, toppa… It is a very good investment.
Give me a call anytime.
সুরঞ্জন: Thank you
[চ্যাট
চলে যায়]
মি: [আপন মনে] দারুণ প্রজেক্ট। আহা নিধুবাবু
শুনতে শুনতে সন্ধেবেলায় সোনাগাছি যাবো।
মিসেস: মরণ তোমার! বাড়ি কেনা বেচার মধ্যে যাওয়ার
কী দরকার? আমরা এখানেই ভালো আছি, বগা তুই কী বলিস?
সুরঞ্জন: [অন্যমনস্ক] জয়সওয়াল তাহলে মিস সাঙভীর
জন্যে বাংলো কিনেছিল, … কিছু বললে?
মিসেস: কিছু না। এবার একটু খাওয়ার ব্যবস্থা
করি। রিমা আর রিত কখন যে আসবে –
[কলিং
বেল।]
মিসেস: ঐ এলো
[
মিসেস চৌধুরী দরজা খোলে। রিমা বিশ্বাস ঢোকে ]
মিসেস: এসো এসো, একা কেন মা?
রিমা: রিত এখনি আসছে। ফিরতে দেরী করল আজ।
ফ্রেশ হয়ে আসছে।
মিসেস: ওগো তুমি ব্যালকনির দরজাটা বন্ধ করে
ACটা চালিয়ে দাও। বসো মা, আরাম করে বসো। চা করবো?
[
মিঃ চৌধুরী AC remote নিয়ে একটা কিছু করে।]
রিমা: ও আসুক, তারপর। তোমার সাথে ত আলাপই
হয় নি ভাই
সুরঞ্জন: আমি সকালে বেরিয়ে যাই, ফিরি অনেক রাতে।
রিমা: কম্পিউটার না শেয়ার মার্কেট?
সুরঞ্জন: ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনীয়ার
রিমা: শুনলেই ভয় লেগে যায়
মিসেস: চাকরি ভালোই করে, আমারো বয়স হচ্ছে,
ভাবছি এবার ওর বিয়ে দিই।
রিমা: খুব ভালো, আমরা বেশ মজা করে খাই। কী
ভাই? ওই দেখুন লজ্জা পাচ্ছে।
সুরঞ্জন: [ লজ্জা ] না, না, সেরকম কিছু নয়। মা
আমাকে বেরুতে হবে।
মিসেস: বেরুবি কোথায়? বৌদির সাথে একটু গল্প
কর্ না। [ রিমাকে ] বড্ড মুখচোরা। আগে পড়াশোনা আর এখন চাকরি , এর বাইরে কিচ্ছু জানে
না।
মি: এখনো মাছ কিনতে শেখে নি।
মিসেস: আসলে ওর পছন্দ অপছন্দ জ্ঞানটাও নেই।
আমরা যে দেখেশুনে দেব – ঐ ত এত চিঠি এসেছে, কিন্তু সাহস পাই না। তুমি যদি একটু বুদ্ধি
দিতে পারো।
রিমা: না, না আমি আর কি বলব –
মিসেস: [সুরঞ্জনকে ] বৌদির সাথে একটু আলোচনা
কর্। এই তুমি এসো ত? ওরা একটু গল্প করুক।
মি: আমি গল্প করছি, যা মাকে লুচি বেলে দে।
[ রিমাকে ] তোমাকে বুঝিয়ে বলি –
মিসেস: ওকে নয়, তোমাকে আসতে বলেছি।
মি: আসছি এক মিনিট
[
ব্যালকনি যায়, হাতে ফোন। মিসেস চৌধুরী লক্ষ্য করে। ]
মিসেস: কাল থেকে ব্যালকনিতে তালা লাগিয়ে দেব।
[ বলতে বলতে ভেতরে ঢুকে যায়।]
মি: [ ব্যালকনিতে ] ফিফটি লাইকস, নো কমেণ্টস।
[ লিভিং রুম হয়ে ভেতরে ঢুকে যায়।]
[
রিমা ও সুরঞ্জন, সুরঞ্জন আড়ষ্ট ]
রিমা: মাকে এত কষ্ট দেওয়ার কী দরকার? একটা
গার্লফ্রেণ্ড করতে পারো না?
সুরঞ্জন: না, … মানে…
রিমা: না কি কেউ আছে? বলতে চাইছো না।
সুরঞ্জন: সত্যি বলছি কেউ নেই, মায়ের দিব্যি
–
রিমা: থাক থাক, আর দিব্যি গেল না । তা গার্লফ্রেণ্ড
হয় নি কেন?
সুরঞ্জন: জানি না।
রিমা: আজকাল ত সবাই স্কুল থেকেই প্রেম করে
। তুমি করো নি কেন?
সুরঞ্জন: মানে হয় নি।
রিমা: কেন, অফিসে কেউ নেই?
সুরঞ্জন: আমাদের বয়সী মাত্র তিনজন আছেন। একজন
রিসেপশনিস্ট, already booked. দ্বিতীয়জন ডেপুটি ডিরেক্টরের সেক্রেটারী, ও আসলে হেড
অফিসের spy. আর তৃতীয়জন public relations officer, ওর জন্যে আমার ম্যানেজার সুইসাইড
করেছে।
রিমা: বাব্বা ! এমন অফিস ছেড়ে দাও।
সুরঞ্জন: আমিও তাই ভাবছি।
রিমা: তাহলে দেখছি আর কোন উপায় নেই। আমাদেরই
একটা ব্যবস্থা করতে হবে। তোমার পছন্দটা একটু বলো ত?
সুরঞ্জন: মানে, ঠিক কী বলব..!
রিমা: ফর্সা না কালো?
সুরঞ্জন: মাঝামাঝি
রিমা: এডুকেশন?
সুরঞ্জন: মাঝামাঝি
রিমা: বাঃ, খুব ভালো । দেখতে মিষ্টি, না কি
সেটাও মাঝামাঝি ?
সুরঞ্জন: মাঝামাঝি চলবে।
রিমা: সত্যি সবাই যদি তোমার মত হত । একটা
মেয়েকে কি তার রূপ দিয়ে বিচার করা যায় ?
সুরঞ্জন: ঠিক
রিমা: তোমার মত উদার ছেলে দেখাই যায় না।
সুরঞ্জন: আমার কাছে মুখ বা গায়ের রঙ এগুলো ফ্যাক্টর
নয়। আসল ফ্যাক্টর হলো ফিগার।
রিমা: [ চমকে ওঠে ] মানে ?
সুরঞ্জন:
মানে proportion ঠিক হতে হবে, রাইট ফিগার চাই ।
রিমা: [ স্বগতোক্তি ] ও বাবা! জ্ঞান টনটনে
দেখছি
সুরঞ্জন: কিছু বললেন?
রিমা: কিছু না । আমি ভাবছিলাম, গুড ফিগার
মানে মডেলদের মত?
সুরঞ্জন: ঠিক তাও না
রিমা: তাহলে?
সুরঞ্জন: সত্যি কথা বলব? ঠিক আপনার মত।
রিমা: [ বিস্মিত, আনন্দিত, একটু লজ্জিতও
] যাঃ , তুমি রসিকতা করছ !
সুরঞ্জন: সত্যি বলছি, আপনার হচ্ছে আইডিয়াল ফিগার।
যে কোন ছেলে বলবে।
রিমা: ইস, এখন ত আমার বয়স হয়ে গেছে, আগে যদি
আমায় দেখতে!
সুরঞ্জন: স্কুলে পড়ার সময়?
রিমা: হ্যাঁ, আমাদের পাড়ার প্রত্যেকটা ছেলে
আমার সঙ্গে প্রেম করতে চাইত। কিন্তু বাবা পুলিশ বলে কেউ সাহস পেত না। লুকিয়ে জানলা
দিয়ে প্রেমপত্র ছুড়ে দিয়ে যেত।
সুরঞ্জন: অসভ্য
রিমা: ঠিক বলেছ
সুরঞ্জন: আমি হলে সরাসরি আপনাদের হাতে চিঠি দিতাম।
রিমা: একজন ছিল ঠিক তোমার মত সাহসী। আমি স্কুল
যাওয়ার পথে সে চুপচাপ আমাকে দাঁড়িয়ে দেখত । একদিন বলা নেই কওয়া নেই সবার সামনে হঠাৎ
একটা চিঠি দিয়ে বলল,’আমার প্রথম প্রেমপত্র’।
সুরঞ্জন: তারপর?
রিমা: আমি তার গালে এমন একটা চড় কষালাম, যে
খানিকক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে চলে গেল। আর কখনো তাকে দেখি নি।
সুরঞ্জন: ভেরী স্যাড
রিমা: পরে শুনলাম ছেলেটা মেডিকেল পড়তে বর্ধমান
চলে গেছে। ইস, যদি চড়টা না মারতাম!
সুরঞ্জন: মিসটেক! মিসটেক!
[
মিসেস চৌধুরী লুচি মাংস মিষ্টি নিয়ে ঢোকে। সঙ্গে চায়ের পাত্র নিয়ে মিঃ চৌধুরী । ]
রিমা: ওমা, এসব কী করেছেন?
মিসেস: কিছু নয়, এই একটু বিকেলের খাওয়া ।
রিমা: রিত কেন দেরী করছে? [ সুরঞ্জনকে ] তুমি
শুরু করে দাও।
[
সুরঞ্জন খেতে শুরু করে। কলিং বেল। মিসেস চৌধুরী দরজা খোলে। রিতের প্রবেশ।]
মিসেস: এসো বাবা এসো
রিত: [ হাত নেড়ে ] হেলো আংকল। [ সুরঞ্জনকে
] হাই
সুরঞ্জন: [ হ্যান্ডশেক করে ] আমি সুরঞ্জন
রিত: আমি রিত
মি: শুধু রিত? আগে পরে কিছু নেই?
রিত: না না শুধু রিত.
মিসেস: তোমরা খেতে শুরু করো, খাবার ঠাণ্ডা
হয়ে যাচ্ছে।
রিত: লুচি মাংস! মাই ফেভারিট
মিসেস: তারপর তোমাদের কেমন লাগছে আমাদের পাড়া?
রিমা: খুব সুন্দর! আমরা ঠিক করেছি এই পাড়াতেই
ফ্ল্যাট নেব।
মিসেস: খুব ভাল, কাছেই স্কুল কলেজ –
রিত: সিটি টাওয়ারে বুকিং করেছি
মি: সিটি টাওয়ার মানে গার্লস কলেজের পাশে
যেটা উঠছে?
রিত: পনেরো তলায় একটা 3BHK নিলাম। ইচ্ছা
ছিল একদম টপ ফ্লোরে পেন্টহাউস নেব। কিন্তু ওর আবার বেশি উঁচুতে মাথা ঘোরে।
রিমা: ভীষণ
মিসেস: আমারো
সুরঞ্জন: সিটি টাওয়ারে সব লাক্সারি ফ্ল্যাট
রিত: একদম। ইন ফিউচার লাক্সারি ফ্ল্যাট না
হলে কোন রিসেল ভ্যালু থাকবে না।
মি: সত্যি বলছ?
রিত: আপনি CNBC-র বিজনেস নিউজ ফলো করেন না?
মি: বগা, তুই যখন বুক করবি ব্যাপারটা মাথায়
রাখবি।
সুরঞ্জন: কিন্তু ওগুলো ত খুব এক্সপেনসিভ। অত
লোন কোথায় পাবো?
রিত: কেন তোমাদের অফিস থেকে দিচ্ছে না? আমরা
পাই।
সুরঞ্জন: আপনি কোথায় আছেন?
রিত: Siemens-এ
সুরঞ্জন: আশ্চর্য, আমিও Siemens-এ। কোন ব্রাঞ্চ
আপনার?
রিত: Camac Street
সুরঞ্জন: Camac Street-এ ত আমাদের কোন ব্রাঞ্চ
নেই।
রিত: দাঁড়াও দাঁড়াও, তুমি কোন্ Siemens-এ
আছো?
সুরঞ্জন: যেটা German multinational
রিত: ও, আমাদেরটা সাউথ আফ্রিকান
multinational, ওর actual নাম হচ্ছে Simons, কিন্তু বাঙালীরা Siemens বলেই ডাকে ।
সুরঞ্জন: কখনো নাম শুনি নি। কী কাজ?
রিত: এক্সপোর্ট ইমপোর্ট। আম্বানিদের যত অর্ডার
আমরা handle করি।
মি: তাহলে ত ভেরি বিগ কোম্পানী!
রিমা: এই তোমাদের অফিসে সুরঞ্জনের জন্যে একটা
মেয়ে দেখো না!
রিত: হয়ে যাবে, কবে চাই?
রিমা: ইয়ার্কি করো না, সিরিয়াসলি বলছি
রিত: আমিও সিরিয়াস। এখন যা দিন পড়েছে, আগে
বিয়ের দিন ঠিক করে তারপর পাত্র পাত্রী খোঁজা উচিত।
মিসেস: সেটা কেন?
রিত: আপনাকে ত হল ভাড়া করতে হবে। এখন ১৪২৮
এর বুকিং চলছে।
রিমা: ও হ্যাঁ, তাই ত।
মি: If you don’t mind, তোমরা কতদিন আগে
বুক করেছিলে?
রিত: হা হা হা [ রিমাও হাসে] আমাদেরটা স্পেশাল
ট্র্যাকে হয়েছিল, এই বলো না!
রিমা: না, না, তুমি বলো।
রিত: ও তখন কলেজে পড়ে, আর আমি কলেজ পাশ করে
বেকার। দুজনে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াই। একদম শপিং মলে ওর জন্যে ওয়েট করছি, দুজন সাদা পোষাকের
পুলিশ এসে এ্যারেস্ট করে আমায় থানায় নিয়ে গেল, সোজা বড়বাবুর ঘরে। খুব গম্ভীর লোক, আমি
ভয়ে কাঁপছি। আমাকে বললেন, ‘তিন মাস সময় দিচ্ছি, একটা চাকরি যোগাড় করো, নয়ত প্রেম করা
বন্ধ। রেস্টোরেণ্ট থাকতে রাস্তাঘাটে প্রেম করো কেন?’
সুরঞ্জন: আপনি কী বললেন?
রিত: আমি বললাম, চ্যালেঞ্জ অ্যাকসেপটেড।
তিন সপ্তার মধ্যে চাকরি যোগাড় করে থানায় বড়বাবুর কাছে গিয়ে টেবিলে appointment
letter-টা রাখলাম।বললাম, ‘এই নিন চাকরি। এক মাসের মধ্যে আপনার মেয়েকে বিয়ে করতে চাই।
ব্যবস্থা করুন।‘
মি: দারুণ ব্যাপার ত !
রিত: শ্বশুর মশাই খুব ঘাবড়ে গেলেন। রীতিমত
নার্ভাস। বললেন, ‘একমাসে কোথাও হল পাবো না, পুলিশ কোটাতেও না। দুমাস টাইম দাও, দেখছি
।‘
মি: দুমাসে হলো?
রিত: হলো, পুলিশের ভাষায় স্পেশাল ট্র্যাক।
ড্রীমল্যান্ড ওয়েডিং হলে একটা মাড়োয়ারী বিয়ে ছিল। ঠিক বিয়ের দিন পাত্রের গোডাউনে
Excise-র রেড হয়ে গেল, পাত্র চালান হয়ে গল লকআপে for 24 hours। বিয়ে ভনডুল। সেই ফাঁকে
আমরা ঢুকে গেলাম।
রিমা: সে কি কাণ্ড। আমি সকাল থেকে খুব টেনশনে।
বন্ধুরা জিগ্যেস করছে কি রে বিয়ে হবে ত? ওদকে বাপি বলে রেখেছে অ্যারেস্ট হলেই ফোন করবে।
সে যে কি টেনশন বলার নয়।
মি: তাহলে কি বগা আজকেই গিয়ে কথা বলবে?
রিত: অবশ্যই, দেরী করা উচিত নয়।
সুরঞ্জন: কোথায় যাবো?
রিত: এক কাজ করো। সিটি টাওয়ারে চলে যাও।
ওরা কিন্তু ক্লাব হাউসের পাশেই একটা নতুন ম্যারেজ হল বানাচ্ছে, বেশী লোকে জানে না ।
১০০০ টাকা বুকিং ফি, যা পাবে তাই নিয়ে নাও। না পেলে আমার নাম করবে।
সুরঞ্জন: আমি তাহলে যাচ্ছি।
মিসেস: হয়ে গেলে একটা ফোন করে দিবি।
সুরঞ্জন: হ্যাঁ [ বেরিয়ে যায় ]
মিসেস: তোমরা একটু চা খাও, অনেকক্ষণ কথা বললে।
[ চা ঢালে ]
রিত: [ চা খেতে খেতে] আঙ্কল, সাবধানে থকবেন।
আপনাদের এজ গ্রুপকে টার্গেট করে অনেক scam চলছে।
রিমা: একদিন বাপিকে মাঝরাতে কল করে একজন বলছে,
পুলিশ থেকে বলছি, আপনার কাছে চোরাই মাল আছে, এখুনি বাড়ি রেড করব। বাপি ত বুঝে গেছে,
ফোন করে জানিয়ে কখনো রেড হয় না । এটা নিশ্চয় scam. বাপি বলেছে, কোন্ চোরাই মালের কথা
বলুন ত, যেগুলো কাল আপনার বাড়ি থেকে রেড করে নিয়ে এলাম। ব্যস্, সঙ্গে সঙ্গে ফোন কেটে
দিল।
[
সবাই হাসে…]
মি: এটা ত চোরের উপর বাটপাড়ি, হা হা হা…
রিত: কতজনকে আবার পোস্টে চিঠি পাঠিয়ে ব্ল্যাকমেল
করছে।
মি: [ সতর্ক হয় ] ব্ল্যাকমেল? কীভাবে করছে?
রিত: এই যেমন ধরুণ লিখল, আপনার গোপন প্রেম
কাহিনী জানি। টাকা না দিলে wife-কে জানিয়ে দেব।
মি: কিন্তু ঠিকানা পাচ্ছে কোথায়?
রিত: ওটা কোন ব্যাপার নয়। আমাদের প্রতেকের
নাম ঠিকানা সব ওদের হাতে আছে।
মিসেস: কিন্তু কারো গোপন ব্যাপার থাকলে, সেটা
কী করে জানছে?
রিত: ভেরি সিম্পল। মাসিমা ক্রিমিনালরা খুব
intelligent হয়। একই গল্প দশজনকে পাঠিয়ে দিচ্ছে। একটা না একটা লেগে যাবে।
মি: ইনটারেস্টিং।
রিত: এরকম কোন কেস জানেন নাকি?
মি: Actually আমরাই একটা চিঠি পেয়েছি আজ।
রিত: তাই নাকি?
মিসেস: চিঠিটা বেশ রহস্যময়।
রিত: কাকে লেখা? আঙ্কলকে না সুরঞ্জনকে?
মি: সেটাও পরিষ্কার নয়।
রিত: মনে হচ্ছে এরা বড় ধরনের ক্রিমিনাল।
চিঠিটা দেখতে পারি কি?
মি: অবশ্যই [ চিঠিটা দেয় ]
মিসেস: [ রিমাকে ] একটা মেয়ে লিখেছে।
রিমা: মেয়েরাও এসব গ্যাঙে থাকে।
রিত: Sender-এর কোন ঠিকানা নেই, আপনাদের
ঠিকানায় শুধু চৌধুরী লেখা, মানে বাবা ছেলের দুজনকেই টার্গেট করা।
মি: Correct, আমারো তাই সন্দেহ।
রিত: কিন্তু পরিতোষ কেউ আছে?
মি: বগার এক বন্ধু
মিসেস: ঘনিষ্ঠ বন্ধু না। এমনি চেনা জানা।
রিত: বুঝলাম। আমার অনুমান পরিতোষ একই চিঠি
পেয়ে থাকবে সুরঞ্জনকে উদ্দেশ্য করে লেখা।
মিসেস: আমি বলি কি, চিঠিটা ছিঁড়ে ফেলে দাও,
আমার ভালো লাগছে না।
রিত: মাসিমা, এই চিঠিটা খুব valuable
evidence. এটাকে বাঁচিয়ে রাখা দরকার। পুলিশকে এটা দিলে –
মিসেস: আবার থানা পুলিশ কেন?
রিত: পুরো ব্যাপারটা বাপি handle করবে। আচ্ছা,
এই মণিমালা মেয়েটিকে সুরঞ্জন চেনে?
মি: সেটাও একটু জটিল। আসলে ও চিনত মণি আর
মালা এই নামের দুই জমজ বোনকে।
রিত: বুঝে গেছি, দুই বোনকে দিয়ে দুই বন্ধুকে
ব্ল্যাকমেল করার চেষ্টা।
মি: আমি ভাবছিলাম –
রিত: ভাবার কাজটা আমার উপর ছেড়ে দিন। ওদেরকে
টোপ খাওয়াতে হবে, যাতে সত্যি সত্যিই ওরা গ্রান্ড হোটেলে আসে।
মিসেস: না না বগাকে আমি হোটেলে যেতে দেব না।
রিত: যাওয়ার দরকারও নেই। ওর জায়গায় পুলিশের
লোক যাবে।
মিসেস: সত্যি?
রিত: সেটাই ত পুলিশের কাজ।
রিমা: রিত একদম বাপির মত। ক্রিমিনালদের একদম
ভয় খায় না।
মিসেস: খুব ভরসা পেলাম। হ্যাঁ গো, রিত যা বলছে
তাই করো।
রিত: শুনুন আঙ্কেল, এই চিঠিতে একটা ফোন নাম্বার
রয়েছে, আমরা ওখানে ফোন করব, আপনার ফোনটা দিন।
মি: আমার ফোন কেন? তোমার ফোন থেকে …
রিত: আপনার ফোন থেকে করলে কেসটা সলিড হবে,
নয়ত সুরঞ্জনের ফোন থেকে – আপনাদেরকেই ত টার্গেট করেছে।
মিসেস: বগাকে আর টেনো না, তোমার ফোনটাই দাও।
মি: ঠিক আছে, বলছ যখন। [ ফোন দেয়। রিত নম্বর
connect করে, ফোনটা মিঃ চৌধুরীকে দেয়, ইশারায় কথা বলতে বলে। মিঃ চৌধুরী খুব নার্ভাস
] হ্যালো … হ্যালো …কোন সাড়া নেই।
[
রিত ফোনটা নেয় ]
রিত: মনে হচ্ছে সিগন্যাল উইক। ব্যালকনিতে
যাচ্ছি।
[
মিঃ চৌধুরী হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। ‘খুব ভয় লাগছিল’ বলে বসে । রিমা বলে, ‘একটু জল খাবেন’
, মিসেস চৌধুরী বলে, ‘একটা লুচি খেলে পারতে। পেটটা ভরা থাকা ভালো।‘ ইত্যাদি ]
রিত: [ ব্যালকনিতে ] হ্যালো বস্, এজেন্ট
রিত বলছি। মেসেজ পেয়েছি, পাঁচ তারিখের Grand Hotel assignment confirm করছি। এই ফোন
নাম্বার আর address, দুটোই very safe. এক সপ্তাহ এটাই use করো। আর Assignment
details টা text করে দাও এই নম্বরে।
[
রিত ভেতরে আসে। ফোনটা ফেরৎ দেয়। ]
মিসেস ও রিমা: কী বলল? কী বলল?
রিত: একটা মেয়ে ধরেছিল।
মি: কে? মণি না মালা?
রিত: নাম বলল না। আমি বললাম যা হয়ে গেছে,
হয়ে গেছে। এখন একটু টাকা দিয়ে ব্যাপারটা মিটমাট করে নেওয়া যায় না কি? বলে দু লাখ টাকায়
রফা হলো।
মি: দু লাখ? একটু কম করা যেত না?
মিসেস: আমাদের টাকা দিতে হবে?
রিত: আপনাদের কিচ্ছু দিতে হবে না। টাকা ত
পুলিশ দেবে।
মিসেস: ও! তাহলে ঠিক আছে।
রিত: আমি চিঠিটা আমার কাছে রাখছি। আর সাতদিন
আমরা মনিটর করবো। এর মধ্য চিঠি বা text আসবে, -- সব আমাকে দেখাবেন। আমি বাপির হাতে
তুলে দেব।
রিমা: হ্যাঁ, বাপি আর রিত দারুণ টিম ।
[
Text-এর আওয়াজ ]
রিত: মনে হচ্ছে একটা text এল।
মি: হ্যাঁ, ঐ নাম্বার থেকেই। লিখছে, ‘Way
2 Go old boy.’ এর মানে কী?
রিত: পুলিশ ঠিক বের করে নেবে। দাঁড়ান, রিপ্লাই
দিয়ে দিই, ‘Copy’, কেস জমে গেছে। [ফোন রেখে দেয় নিজের কাছে]
মি: তুমি না থাকলে আমি ত কিছুই করতে পারতাম
না।
রিত: আঙ্কল রিলাক্স। Everything under
control. …এই রে আবার সিগন্যাল ডাউন ।
[উঠে
ব্যালকনি যায়। মিঃ চৌধুরী লুচি খায়। ]
মিসেস: বগার এখনো কোন ফোন নেই কেন?
মি: কোথাও আড্ডা দিচ্ছে হয়ত।
রিত: [ ব্যালকনিতে গিয়ে ফোন করে ] বস্, দু
কেজি gold তাই ত?...okay, okay. আমার ফোনে কোন message নয়, I repeat no message on
my phone, high risk of tapping. IB-র লোক ঘুরছে...Thanks আর হেরোইনের একটা পাউচ courier করে
দাও, এই address-e. ঠিক আছে? ওপরে
lingerie sticker দিয়ে দেবে। Bye.
[ফোন
অফ করে।]
আঙ্কল
একবার আসবেন? [ মিঃ চৌধুরী আসে। রিত ফোন ফেরৎ দেয়। ] আপনার কছে একটা favour চাইবো,
if you don’t mind. আমাদের ম্যারেজ অ্যানিভার্সারিতে রিমাকে একটা spcial surprise
gift দেব। গিফটটা courier-এ আসবে আপনার নামে। Is that okay?
মি: Absolutely okay
রিত: Thanks a lot. আপনার কাছে রেখে দেবেন
। রিমা যেন জানতে না পারে, আপনার মিসেসকেও জানাবেন না। মেয়েরা secret রাখতে পারে না
।
মি: You are right. আচ্ছা কী গিফট জানতে
পারি?
[
রিত কানে কানে বলে। মিঃ চৌধুরী চমকে ওঠে। ]
মি: কী কালার?
রিত: Black
মি: No no go for red. Red is hot.
রিত: Okay
[
দুজনে ভেতরে আসে। ]
রিম: চলো, আমাদের যেতে হবে।
[ মিঃ চৌধুরির ফোন বাজে। সবাই আবার উদ্বিগ্ন। ]
মি: বগার ফোন… বল্ , কী? হয়েছে? ফাল্গুন
মাসে ! AC hall, খুব ভালো ।
মিসেস: একটু মিষ্টি মুখ না করে যেতে দিচ্ছি
না বাবা।
[
রিত রিমা মিষ্টি খায়।।]
রিমা: এটা নিশ্চয় নিউ সুইটস-এর মিষ্টি।
মিসেস: তাই হবে মনে হয়।
রিমা: এই সন্দেশটার নাম সোনামন সন্দেশ ।
মি: পচা বলল, ‘এই মিষ্টিটা নিয়ে যান। তাই
নিলাম।‘
রিমা: পচা কে?
মিসেস: ঐ নিউ সুইটস-এর কর্মচারী, তোমার মেসোমশাইকে
চেনে।
রিমা: খুব ভালো লাগলো মাসিমা। আজ আসি। চলো।
রিত: আঙ্কল বাই। [ দুজনের প্রস্থান। ]
মিসেস: হলটা যখন বুক করা হয়ে গেছে, তুমি কলকাতার
চিঠিগুলো নিয়ে লেগে পড়ো। হাতে বেশি সময় নেই।
[ সুরঞ্জনের প্রবেশ, প্রায় নিঃশব্দে ]
সুরঞ্জন: আমি বলি কি বিয়ের ব্যাপারে
তাড়াহুড়ো করতে নেই।
মিসেস: তুই এসে গেছিস। দ্যাখ, হল বুকিং তো
হয়েই গেছে –
সুরঞ্জন: বুকিং ত হয় নি।
মি: কিন্তু তুই যে ফোন করে বললি
সুরঞ্জন: সেটা শুধু রিত বিশ্বাসকে শোনানোর জন্য।
মি, মিসেস: তার মানে?
সুরঞ্জন: যে লোকটা প্রথমে বললো Siemens-এ কাজ
করে, তারপর বললো Simons-এ, তার সম্পর্কে একটু কৌতুহল হলো।
মি: হাইলি সাসপিসাস
মিসেস: তখন ত রিত রিত বলে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলে
সুরঞ্জন: গুগল করে বের করে নিলাম Rito Posh B
বলে একজনের Facebook profile; friend list-এ রিমা বিশ্বাসও আছে। তখনই একটা puzzle
solved হয়ে গেল। Rito Posh B আসলে Poritosh B মানে পরিতোষ বিশ্বাস।
মি: ইস, আমার আগেই ভাবা উচিত ছিল, ঐ রিত
নামটার আগেপিছে আরো কিছু আছে।
সুরঞ্জন: তারপর যখন আমাকে হল বুকিং-এর আছিলায়
বাইরে যাওয়ার চাপ দিতে লাগলো, তখন বুঝলাম ও বিশেষ একটা জিনিসের জন্যে এসেছে। সেটা আসলে
ওরই জিনিস।
মি: কী সেটা?
সুরঞ্জন: আমাদের রহস্যময় চিঠিটা নিশ্চয় নিয়েছে।
মিসেস: ঠিক ধরেছিস
সুরঞ্জন: কোন চিন্তা নেই আমি চিঠিটার ফটো তুলে
রেখেছি। Apollo Real Estate -এর সঞ্জীব দাসকে ফোন করে জানলাম সিটি টাওয়ারে পনরো তলায়
বুকিং ত দূরের কথা, দশ তলার উপরে plan-ই নেই।
মি: এখনো ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না।
সুরঞ্জন: আর ম্যারেজ হলর ব্যাপারটা
একটা স্ক্যাম। খালি প্লট দেখিয়ে বুকিং ফি কালেকশন চলছিল একটা গ্রুপ। আজকেই পুলিশ তাদের
bust করেছে, রিত এখনো জানে না মনে হয়। থানায় গিয়ে ইনসপেকটার মণিকার কাছে জানলাম অনেকেই
রিত-এর reference নিয়ে আসছিল। পুলিশ ওকে trace করতে পারছে না, কারণ ওর তিনটে সিম-ই
এখন inactive.
মি: আমার ফোনটাও ব্যবহার করেছে
সুরঞ্জন: আরো ভালো। এগুলো সবই evidence.
মিসেস: কী সাংঘতিক ব্যাপার, আমাদের পাশের ফ্ল্যাটেই
–
সুরঞ্জন: আমার মনে হয় রিমা বৌদি এসব কিছুই জানে
না।
মিসেস: আহা কী মিষ্টি মেয়েটা, খুব খারাপ লাগছে।
সুরঞ্জন: আচ্ছা মা, এই ফটোটা দেখো ত!
মিসেস: কী সুন্দর! কে ও?
সুরঞ্জন: ইনসপেকটর মণিকা। কাল চা খেতে নেমন্তন্ন
করেছি।
মিসেস: অ্যাঁ সে কি রে?
সুরঞ্জন: আর বলেছি বাবা মাকেও সঙ্গে নিয়ে আসতে।
চায়ের সঙ্গে টা যেন থাকে।
মি: [এতক্ষণে বুঝতে পারে] ও হো হো, … পুলিশ
বৌমা! দারুণ হবে।
সবাই
ফ্রীজ করে, বা পর্দা পড়ে।
ছবিঃ অঞ্জন চক্রবর্তী
ছবিঃ অঞ্জন চক্রবর্তী
ভাল লাগল।
উত্তরমুছুন