আমাদের কথাঃ সব পথ গেছে রোমে



সব পথ গেছে রোমে 


সব পথ রোমে গেছে। কলকাতার যে পথ দিয়ে বিদ্বজনদের 'মৌন মিছিল' হাঁটছিল সেই পথ আর যে পথ দিয়ে গেরুয়া বাহিনীর 'উল্লাস মিছিল' হাঁটছিল সেই পথও। রোমে সিজার থাকে। রোমে শিল্পী, সাহিত্যিক, ব্যবসায়ী, বুদ্ধিজীবী, সুন্দরী, লুচ্চা, বেশ্যা সবাই থাকে। ক্রীতদাস, গ্লাডিয়েটর, আর বর্বররা থাকে। আর থাকে একজন স্পার্টাকাস। 

পৃথিবীর বহু জায়গা থেকে দাসরা রোমে আসে। কালো, সাদা, বাদামি, হলুদ নানা রঙের, নানা ভাষার দাস। কাজের সময়ও যাদের পায়ে জড়ানো থাকে শেকল। নিজের বলে কিচ্ছু নেই। তাদের উৎপাদনী ক্ষমতা, সৃজনী ক্ষমতা, তাদের শারীরিক ক্ষমতা, তাদের যৌন ক্ষমতা সবই মালিকের ইচ্ছায় নিয়ন্ত্রিত। 'অনির্বচনীয় হুন্ডি' মালিকের হাতে। জীবন যখন মৃত্যুর চেয়ে দুর্বিষহ বিদ্রোহ তখন অবশ্যম্ভাবী। তাই, স্বপ্ন নয়-শান্তি নয়-ভালোবাসা নয়, হৃদয়ের মাঝে এক ঘৃণা জন্ম নেয়। সেই মহতী ঘৃণার আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় রোম। স্পার্টাকাসের আগুন ছড়িয়ে পড়ে বর্বর আর দাসদের হাত ধরে। কে না জানে, লুম্পেন আর প্রলেতারিয়েতদের এলায়েন্স একটি ডেডলি ফোর্স! আল্পস ডিঙিয়ে বর্বররা বার বার রোম আক্রমণ করে, প্রথমে ভ্যান্ডলরা, পরে গথরা। দাসদের কাছে বর্বররা ছিল প্রতিশোধ গ্রহণকারী বীর। দাসরা নগর দখল করে বর্বরদের জন্য নগরের তোরণগুলো খুলে দেয়। অভিজাত শ্রেণির প্রতি ঘৃণায় ক্ষোভে আমন্ত্রণ জানায় বর্বরদের। বুনো বর্বররা রোমের সমস্ত বড় বড় মন্দির, সাজানো ভাস্কর্য , দেবতা আর মানুষের মূর্তিগুলো ভেঙেছিল। রোমান কবিদের লেখা অজস্র পুস্তক তারা পুড়িয়েছিল। একশ বছর ধরে পুড়েছিল রোম। মহতী ঘৃণার আগুনে।

সব পথ রোমে গেছে। সব রোমে একজন স্পার্টাকাস থাকে। থাকতে হয়। কোনো এক অ্যম্ফিথিয়েটারের ভিড়ে দর্শক সেজে বসে থাকে ইতিহাস। খুঁজে নেয় স্পার্টাকাসকে। তার চওড়া কাঁধে ভর দিয়েই ঘটে ইতিহাসের উল্লম্ফন। 

স্পার্টাকাসকে শ্রদ্ধা জানিয়েই আমাদের এই ছোট্ট চেষ্টা। চেষ্টা ছাড়া আর কিইবা করা যেতে পারে! চেষ্টা মস্তিস্ককে শৃঙ্খল মুক্ত করার। মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষগুলোকে যদি কসরতের মাধ্যমে একটু শক্তিশালী করা যায়! মালিকের ইচ্ছায়, মালিকের মনোরঞ্জনের জন্য গ্লাডিয়েটরের মত ফালতু লড়াই লড়তে থাকা মস্তিষ্কে যদি জাগিয়ে তুলতে পারা যায় ঘৃণা! যদি মস্তিষ্কটা, সাধারণ গ্লাডিয়েটর থেকে হয়ে উঠতে পারে একটা স্পার্টাকাস ! যাঁরা পড়বেন তাঁঁদের প্রত্যেককে লিখতে অনুরোধ করি। যাঁরা লিখবেন তাঁদের প্রত্যেককে পড়তে অনুরোধ করি। সব রকমের প্রশংসা, নিন্দা, পরামর্শ সাদরে আমন্ত্রিত। আপনাদের আন্তরিকতা, সাহচর্যে কিছুটা সফল হতেও পারে আমাদের প্রয়াস।

ধন্যবাদ।



* ব্যবহৃত ছবি গুগ্‌ল থেকে সংগৃহীত।

৭টি মন্তব্য:

যোগাযোগ ও লেখা পাঠানোর ঠিকানাঃ spartakasmagazine@gmail.com