আঁচঃ এয়োনিয়ান অনির্বাণের ধারাবাহিক গদ্য



ইভাঙ্কা ও দুঃশাসনেরা


গ্রাম বনাম শহরের যুদ্ধে, গত কয়েক বছরে একটা চেঞ্জ দেখা যাচ্ছে। মানে আমাদের দেশের গ্রাম আর শহরতলি গুলোতে। চাষে লাভ কমে যাওয়ায়, জমিগুলো আস্তে আস্তে কম উর্বরা হওয়ায় চাষীরা চাষবাস ছেড়ে শহরতলি বা বড় শহরগুলিতে বিভিন্ন কাজের খোঁজে গ্রাম ছেড়ে আসছে। অন্যদিকে বড় শহরগুলোও এই এত লোকসংখ্যার চাপ নিতে না পেরে সাম্রাজ্য বাড়াচ্ছে।পার্শ্ববর্তী গ্রাম,লা জায়গা বা কৃষি জমিগুলোতে তৈরি হচ্ছে উঁচু উঁচু ফ্ল্যাট বাড়ি। গড়ে উঠছে উপনগরী। আপনারা লক্ষ করেছেন নিশ্চয়ই। প্রমোটার, প্রমোটারের দালাল, তস্য দালাল, পার্টির নেতা, পুলিশ, ক্লাবের লুম্পেন এদের নিয়ে গঠিত সেনাবাহিনীই মূলত শহরগুলোর হয়ে সাম্রাজ্যের পরিধি বাড়াচ্ছে।

কিছুদিন আগে নিউজে দেখলাম ইভানকা ট্রাম্প নামে এক ঝিং চ্যাক ফর্সা ম্যাডাম আসবেন বলে হায়দ্রাবাদের রাস্তায় সব ভিখিরিকে মেরে খেদিয়ে দেয়া হচ্ছে। আর কুকুরগুলোকে বিষ দেওয়া হচ্ছে। 'মানুষগুলো কুকুর হয়ে যাচ্ছে, কুকুরগুলো পোকা।' হয়েই থাকে। ব্রাজিলে রিওতে সোনার দোকানে লুঠপাট বেড়ে গিয়েছিল। তো, মালিক এবং সরকার ঠিক করে মশা মারার পদ্ধতি নেওয়ার। অর্থাৎ ডিম বা লার্ভা অবস্থায় খতম করো। ডাকাতি করছে ফুটপাথের লোকেরা। তাই প্রিকসন হিসেবে ফুটপাথের বাচ্চাগুলোকে মারো। বাচ্চাগুলোকে খতম করা সোজা। বাচ্চাগুলোকে খতম করার খরচ কম। বন্দুকের গুলির খরচও বাঁচে। জাস্ট কয়েক ফুট তুলে নিয়ে আছড়ে মারলেই খুলি ফেটে ঘিলুটা বেরিয়ে আসে। রক্তের সাথে মিশে যায়। রিও-র রাস্তায় চলেছিল এই রকম বাচ্চা নিধন অভিযান। সরি, "গরিব বাচ্চা নিধন অভিযান"। মিডিয়াতে পুরোটা আসেনি।

তো, একটু আগে যে কথাটা বলছিলাম। এদিক থেকে যে সব লোকগুলো শহরে ভিড় জমাচ্ছিলো গ্রাম থেকে, মানে এখনো জমাচ্ছে, তারা দ্যাখে শহরে কেস আরো পুদিচ্চেরি। এমনিতেই কাজবাজ নেই। কারখানাগুলো একটা একটা করে বন্ধ হচ্ছে। ছোটখাটো ব্যবসা করবে- সেখানে শালা এ-মস্তান ও-মাস্তান, এ পার্টি ও পার্টিকে ধরতে হবে, কমিশন দিতে হবে। তার ওপর আবার ফুটপাথে শোয়াও মুশকিল। পৌরসভা,পুলিশ, সুশীল সমাজ আর সলমন খানদের উপদ্রব। তো কী করব? খাবো কী? শোব কোথায়? ভালোবাসবো কোথায়? বাচ্চা বিয়োব কোথায়?

ফ্লাইওভারের নীচগুলো যে ক্রমশ জনবহুল হয়ে উঠছে আপনারা দেখেছেন নিশ্চয়ই। টিকিয়াপাড়া, দাসনগর  স্টেশনের পাশের ঝুপড়িগুলো দেখেছেন। এ-ও দেখেছেন এরা সংখ্যায় বাড়ছে। অনেক মরছে, যখন তখন মরছে...তবু কি করে যেন সংখ্যায় বাড়ছে! এ-ও দেখেছেন নিশ্চই শহরতলিতে মদের দোকান, দেহ ব্যবসা, খুন, রাহাজানি বাড়ছে। সস্তায় নিশ্চয়ই বেশ্যা, খুনি, ড্রাগ পাচারকারী, মেয়ের দালাল এসব পাওয়া যাচ্ছে ! নইলে বাড়বে কি করে!

একটা বেপরোয়া, বিবেকহীন, খতরনাক শ্রেণির ফরমেশন হচ্ছে। এদের ঘর নেই, জমি নেই, স্থায়ী ঠিকানা নেই, স্থায়ী বাপ নেই, বউ নেই, বাচ্চা নেই। শুধু ঘেন্না আর বিশ্বাস ভঙ্গের ক্ষোভ আছে।
সুরক্ষিত শত্রুপুরীতে এরা ঢুকছে, ট্রয়-এ পাঠানো স্পার্টার উপহার সেই ঘোড়াটার মতোই। গ্রাম থেকে শহরে আসা গুপ্ত ঘাতকের দল। বিবেকহীন, বেপরোয়া দুঃশাসনের জাত!

আমি লোকটা হয়তো বদ! তাই যখনই কবি শহরের ফ্লাইওভারগুলোকে বলেন "তন্বী শহরের শরীরের ভাঁজ", আমার মনে পড়ে এই সব দুঃশাসনদের কথা! যে স্বপ্নটা, বা ফ্যানটাসাইজেশনটা আমি বা আমার মতই আরো কেউ কেউ করেন...

তিলোত্তমা মহানগরী, তন্বী, মল শোভিত - ঝিনচ্যাক মহানগরী হয়ে ওঠে ইভানকা ট্রাম্পের শরীর... বড়লোকদের দেশের বড়লোক কর্পোরেট শরীর... তারপর সেটা হয়ে যায় দ্রৌপদী...! পঞ্চপাণ্ডবদের সাধের বউ দ্রৌপদী। ...অপেক্ষা করে আছি সেইসব দুঃশাসনগুলোর হাতে দ্রৌপদীর নিদারুন লাঞ্ছনা দেখবো বলে।

ট্রয়ের অভেদ্য দুর্গও ধ্বংস হয়েছিল।


ছবিঃ অর্ণব মণ্ডল



৬টি মন্তব্য:

  1. Sahasi Lekha...Erakam Lekha aaro paoya jaabe asha kari

    উত্তরমুছুন
  2. Gochhano Gadya. Lekhakke anorodh Lekha chaliye jaan. Anya typer Lekhar dharan aapnaar. Bangla sahitya anek kichhu pete paare aapnaar kaachhe.

    উত্তরমুছুন
  3. দারুণ লাগলো। ক্ষুরধার লেখনী। হৃদয় ছুঁয়ে গেল। পরের সংখ্যার অপেক্ষায়।

    উত্তরমুছুন
  4. টানটান গদ্য।ঋজু বক্তব্য।কোনো জটিলতা নেই।সোজা ব‍্যাটে খেলা।শব্দশৃঙ্খলাও নজর কাড়ে।নিপাট গদ‍্যের শরীরে কবিতার নিপুণ পেলবতা।অভিনন্দন।

    উত্তরমুছুন
  5. ধারালো শব্দ। ভাল হয়েছে এমন একটা গল্প বলার স্টাইলে গদ্য লেখা।

    উত্তরমুছুন
  6. ছবিটা আমার তোলা নয়। অর্ণব ঘোষের। সম্পাদক মন্ডলীকে ভুলটি সংশোধন করার অনুরোধ জানালাম।

    উত্তরমুছুন

যোগাযোগ ও লেখা পাঠানোর ঠিকানাঃ spartakasmagazine@gmail.com