যযাতি দেবলের কবিতা








দীপ্ত কশেরুকা

নিজের ভিতরে নিজে চুপ থাকি চুপ!
শব্দ ভাঙে মেঘের মিনারে;
ওই দেখ ছুটে আসছে হারে রেরে রে!

#
কী জানি কেমন ধন্দে নিজেকেই ভুলে থাকতে চাই
থেকে থেকে মন্দ্রস্বর বুকে বাজে প্রহর প্রহর;
হিংসক অশ্বত্থামা বাণ কে হাঁকে সম্বর সম্বর!

#
নাহলে সে পেন্টাগন লজ্জাহীন পিশাচী উল্লাসে
মুছে দেবে মানুষের মানবিক টিকা;
বিপ্রতীপে দৃঢ় হোক ছিলা টান দীপ্ত কশেরুকা।


নীল নক্সা


মধ‍্যরাতে নীল নক্সা পাহাড়ি বাংলোয়
ঠাণ্ডায় ঠাণ্ডায়
তারপর কত জল বয়ে গেল
তিস্তা ও তোর্ষায়!

#


বিপুল অর্থের স্রোত আড়াই পোঁচে লক্ষ কোটি,
শকুনির পাশা;
নীরব বিভৎসা নাচে, ঘিরে গোলাপ উপত্যকা,
বাঘবন্দি কৃষকের মজুরের আশা
কত রক্ত জল হয়ে মিশে গেল
বেড়াচাঁপা তালপট্টি খালে:
বাঁধা হয় ছাঁদা হয় অস্থিমজ্জা একাকার
ঘড়িয়াল বাজারীর চালে!

#


চৌদিকে আতস কাচ শাকের তলায় মাছ
লোপাটের খেলা ফাঁকতালে
চোর ও কামারের সখ‍্যে হাত পাতা কোটালের
উর্দি গেছে খুলে!



উড়ান

কাছেই ছিলি, সবার ভিড়ে একটুখানি ছুঁয়ে
দু'চোখে যেই চোখ রাখলি তখন দুপুরবেলা,
হঠাৎ কেন উড়াল দিলি কালবোশেখি হয়ে!

#

তখন থেকেই ওই অপাঙ্গে কেবল মায়ার খেলা:
তখন থেকেই নিম্নচাপ, বিচ্ছিরি দিনরাত;
একটু একটু আঁধার নামে থম মারা সেই বেলা।

#

বৃষ্টিপোকা, পোড়ার নেশায় মেখে বাতির মায়া;
পুড়তে পুড়তে পুড়েই মরে পাখনা পালক ঝরে!
কে এল সে কেনই এল ওখানে কার ছায়া?

 #

খেলার ছলে মায়ার খেলা, ঘরের মধ্যে ঘর:
শঙ্খলাগা গন্ধে তখন ঘি ম ম করে
আমায় কেন আনলি টেনে ঘুঘুডাঙার চর!

#

ছিলি কাছেই; একটুখানি ছোঁয়াছুয়ির ছলে,
স্বপ্নে পেলি স্বপ্ন উড়ান রহস্য কৌশলে!

ছবিঃ অর্ণব নন্দী

৫টি মন্তব্য:

  1. শব্দের অপূর্ব ব্যবহার

    উত্তরমুছুন
  2. খুব সুন্দর। বেশ কয়েকবার পড়লাম। ছন্দোময় লেখা। অপূর্ব শব্দচয়ন। আসলে জগতে জোর করে কাউকে সরিয়ে অযোগ্য কেউ যখন তার জায়গা নিতে চায় তখন তো তাকে নীল নক্সার সাহায্য নিতেই হয়। লেখক বেশ স্পষ্টবাদী। সহজ ভাবে সহজ কথাটিই বলেছেন। কবিকে অসংখ্য ধন্যবাদ। সঙ্গের ছবিটিও চমৎকার।

    উত্তরমুছুন
  3. একটা অদ্ভুত আগ্রাসী অবস্থাকে নিটোল একটি কবিতায় প্রকাশ করেছেন যযাতি দেবল। লুঠেরাদের উল্লসিত চিৎকারে হয়তো চুপ করে থাকা ছাড়া তাৎক্ষণিক কোন উপায় থাকেনা, তাই কিছু সময় ভুলে থাকা জরুরি হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় ধন্দ তো হবেই। নিজের জাগ্রত বোধের সঙ্গে যুদ্ধ যে। তবু কবি হিসেবে নিজেকে সংযত রাখা ছাড়া উপায়ও নেই। নাহলে যুদ্ধবাজদের ইশারায় তো মানবতাই ধ্বংস হয়ে যাবে!
    কিন্তু সেটা তো আর শেষ কথা হতে পারেনা। তাই মেরুদণ্ড টানটান রেখে প্রস্তুত থাকতেই হবে। এই প্রস্তুতি আর আশার কথাটাই কবিতাটিকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে।

    নীল নক্সা কবিতায় একেবারে খোলাখুলি এসে গেছে পুরো পরিস্থিতি। পরিণত কাব্যিক ভাষায় উন্মোচিত হয়েছে শাসন আর শোষণ, আর মুখোশের নিচের আসল চেহারা্টা। স্যালুট কবিকে।

    উড়ান কবিতায় সেই চিরকালীন আলো আঁধারির গল্প। কিছুটা রহস্যঘন আবেগ আর অমোঘ দ্বন্দ্ব। আত্মজিজ্ঞাসাও। বাস্তবতাকে মাথায় রেখে রোম্যান্টিক ভাবনার উজ্জ্বল রূপরেখা।

    উত্তরমুছুন
  4. খুব আকর্ষণীয় ওয়েব ম্যাগাজিন। ভালো লাগলো।

    উত্তরমুছুন

যোগাযোগ ও লেখা পাঠানোর ঠিকানাঃ spartakasmagazine@gmail.com