রেহান কৌশিকের কবিতা







জতুগৃহ

মাটি নেই পা রাখার। দেখি- ঝুলন্ত আমার দেহ
ঘিরে রাখে দুষ্টু রাক্ষসেরা!
আজন্ম দেখেছি সব চলে যায় দূরে
বয়স্ক পথেরা দোলে, কখনো দেখিনি কারও ফেরা!

এভাবে কি কেউ-কেউ থেকে যায় নির্বান্ধব, সঙ্গহারা, একা?
মৃত্যুর দু-হাতে শুধু ঢেলে দেয় সমীহ?

ধ্বংস ছাড়া যেন আজ স্পষ্ট কোনো সত্য নেই এই পৃথিবীতে
প্রতিটি বিশ্বাস ভেঙে জেগে উঠছে নগ্ন জতুগৃহ।

হাড়

দিকে দিকে হত্যার আওয়াজ
দিকে দিকে নিভে যাচ্ছে সঙ্ঘহীন জনতার স্বর।
দেয়ালে ঠেকেছে পিঠ, সমস্ত সম্ভ্রম…
এ ভূমি এখন আর জীবিত নেই
          এই দেশ যেন আজ মৃতদের ঘর!


রাজধর্ম ছিঁড়েছে শুকুন
মানুষের অধিকার মুখে নিয়ে ছুটে যায় শৃগালের দল
সময়ের চতুর্পাশে অন্তিমের হাহাকার, চিৎকার সম্বল।

পিছতে পিছতে আর কতদূর ফিরে আসা যায়?
এখন সময় যেন রুখে দাঁড়াবার…
            কে বলে এখন আর সে-দধীচি নেই?

এই তো রয়েছে কবি, জানু থেকে খুলে নাও হাড়।

পাখি

শ্রমে আর সাধনায় ছিল না তো কার্পণ্য কোথাও।
পাথরে পাথর হয়ে ভেসেছিল দিন
ছেনি আর হাতুড়ির মুখ থেকে জেগেছিল প্রগাঢ় আগুন
               ফুটেছিল মুখচ্ছবি গুহার শরীরে
               সেই যেন প্রিয়-শস্য—প্রেমিকের জল ও জমিন।

ভুলে গ্যাছো- সেই রং, রেখা?
অথচ সজল-স্মৃতি বুকে নিয়ে আজও
                         একা বসে আছে আলতামিরা

ভালোবাসা কোনোদিন হতে পারে স্মৃতি-শূন্য সময়ের স্তব?
দ্যাখো সব মনে পড়ে যাবে-
          নিজের বুকের কাছে অন্ধ হয়ে সরে এসো আরও
          অন্ধকার জুড়ে মনে করো প্রেমিকের মুখ

দ্যাখো- তোমার হৃদয় ফের
ভেসে যাবে ফেলে আসা জীবনের দিকে
               যেভাবে ধানের মাঠে উড়ে যায় ক্ষুদার্ত পাখিরা।


মাঞ্জা

নিরীহ সুতোর গায়ে মাঞ্জা দাও কেন?
একাই দখল করবে সমস্ত আকাশ?

শূন্যের আস্বাদ নিতে যারা খুব স্বপ্ন দেখেছিল
                    রাত্রিদিন মেহনত করে
                         যারা ভেবেছিল একদিন
                    শূন্যের বাগানে গিয়ে ফোটাবে মুকুলস?
সেইসব ঘুড়িদের দিলে স্বপ্নের আভাস?


আঠা ও কাঁচের গুঁড়ো যতই যতই সুতোকে আজ ঘাতক বানাক
               রোখার ক্ষমতা নেই কারও
লাখো-লাখো স্বপ্ন-দ্যাখা ঘুড়ি আজ স্লোগানে জেগেছে
মিছিলে-মিছিলে দ্যাখো জেহাদি পোশাক!

যতদিন খিদে আর অধিকার বুঝে নিতে গড়ে ওঠে দল
তাদের ভাসাতে পারে, জন্মায়নি তেমন কোনো সুনামির জল!

ছবিঃ অর্ণব নন্দী

1 টি মন্তব্য:

  1. রেহান ভাই, একজন কবি যিনি ভালবাসার গানে মগ্ন থাকেন, তাঁর এই ভালবাসা জীবনকে ভালবাসা,আর এই ভালবাসার কারনেই তিনি যখন কোনো অন্যায় দেখেন অসততা দেখেন দ্রোহের আগুনে জ্বলে ওঠে তাঁর কবিতা । এই কবিতাগুলি সব ই তাঁর সেই তীব্র ক্ষোভের আগুন ।যুগে যুগে সত্যদ্রষ্টা কবিরা তো এইভাবেই অসাম্য অন্যায় আর অসত্যের বিরূদ্ধে কলম ধরেছেন । রেহান ভাই এর লেখা এই সময়ের বাঙলা কবিতার জগতে এক অসামান্য ভাষার প্রতীক । তাঁকে আমার শ্রদ্ধা ও ভালবাসা জানাই ।

    উত্তরমুছুন

যোগাযোগ ও লেখা পাঠানোর ঠিকানাঃ spartakasmagazine@gmail.com